ঢাকা: মানিকগঞ্জে সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানির প্ল্যান্ট স্থাপন বিষয়ক একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে। যা বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯০৫ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার তেজগাঁওস্থ এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ৬০ বছরের পুরাতন ও জীর্ণ প্ল্যান্টটি স্থানান্তর করে মানিকগঞ্জে কারেন্ট গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস (সিজিএমপি) নীতিমালা অনুসরণ করে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী প্ল্যান্ট স্থাপন করা সম্ভব হবে। এছাড়াও, অত্যাবশ্যক ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের উৎপাদন বাড়িয়ে সরকারি খাতে ওষুধের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করা যাবে। দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে শক্তিশালী করা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ প্রস্তুত করে দেশের ওষুধ শিল্পকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং ওষুধের আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিজিএমপি নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ গুণগত মানের বর্ধিত পরিমাণ ওষুধ উৎপাদনের মাধ্যমে সরকারি খাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ওষুধ সরবরাহে বেসরকারি খাতের উপর নির্ভরতা কমিয়ে সরকারি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত শক্তিশালী হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা  বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ ওষুধের চাহিদা পূরণ এবং বিদেশে ওষুধ রফতানির জন্য ১৯৮৩ সালে ইডিসিএল প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ঢাকা, বগুড়া এবং গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ওষুধ উৎপাদনকারী ইউনিট থেকে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর (সিএমএস) ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এছাড়া, ইডিসিএল থেকে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইসিডিডিআর,বি ওষুধ কিনে থাকে।

ঢাকার তেজগাঁওস্থ ইডিসিএল প্ল্যান্টটি প্রায় ৬০ বছরের পুরনো। জমির স্বল্পতা এবং সরকার নীতির কারণে এটিকে বর্ধিত বা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্ল্যান্টটিতে স্থাপিত পুরাতন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সিজিএমপি অনুযায়ী গুণগত মানের ওষুধ উৎপাদন এবং সরকারি খাতে ক্রমবর্ধমান ওষুধের চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিজিএমপি অনুসরন করে গুণগতমানের ওষুধ উৎপাদনের পাশাপাশি সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো, ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ এবং বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সরকারি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের উদ্দেশ্য ঢাকার তেজগাঁওস্থ প্ল্যান্টটিকে মানিকগঞ্জে স্থানান্তরের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে স্থাপনা ও অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, মান নিশ্চিতকরণ, নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন বিভাগ, ট্যাবলেট উৎপাদন ইউনিট, ক্যাপসুল ও ড্রাই সিরাপ ইউনিট, লিকুইড উৎপাদন ইউনিট, স্টেরাইল উৎপাদন ইউনিট, লাইফোলাইজড উৎপাদন ইউনিট, ২টি ভাণ্ডার ইউনিট, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইউটিলিটি ভবন এবং অন্যান্য ১৫টি স্থাপনা।

অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বাউন্ডারি ওয়াল, সেন্ট্রাল ড্রেইনেজ, ফুটপাথ, ওয়াকওয়ে ও কারপোর্চ, ইউটিলিটি ব্রিজ ও সেডেড ওয়াকওয়ে,ওয়াচ টাওয়ার, ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ বিল, পণ্যের ভাড়া ও পরিবহণ ব্যয় এবং ব্যাংক চার্জ, কনসালটেন্সি, হায়ারিং চার্জ, বেতন-ভাতা এবং ল্যান্ডস্কেপিং করা হবে।